আজ আপনাদের সঙ্গে দেশপ্রেম নিয়ে একটা প্রবন্ধ রচনা share করলাম, আশা করি এটি ছাত্রছাত্রীদের অনেক হেল্প করবে



দেশপ্রেম প্রবন্ধ রচনা 


ভূমিকা - দেশের প্রতি ভালোবাসাই দেশপ্রেম। পরাধীন দেশকে মাতৃরূপে কল্পনা করে, সেই মায়ের মুক্তির জন্য কত দেশপ্রেমিক নিজেদের প্রাণ বলি দিয়েছেন, বিসর্জন দিয়েছেন নিজেদের জীবনের সুখশান্তিকে। ব্রিটিশ অপশাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশকে স্বাধীন করার জন্য তাদের দেশপ্রেমের জাগরণ আজও আমাদের উৎসাহিত করে। প্রাণিত হই দেশপ্রেমে।


দেশপ্রেম ও রাজনীতি - পরাধীন ভারতবর্ষে সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধি, বাল গঙ্গাধর তিলক, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ ঘোষ, লালা লাজপত রায়, রাসবিহারী বসু প্রমুখ দেশপ্রেমিকরা দেশের মুক্তির জন্য জাতীয় কংগ্রেসের পতাকাতলে মিলিত হয়েছিলেন। আজও রাজনীতির প্রয়োজন দেশকে সেবার জন্য, দেশকে ভালোবাসার জন্যই। দেশপ্রেম ছাড়া যে রাজনীতি, তা নগ্ন রাজনীতি স্বার্থলোলুপতা ছাড়া আর কিছুই নয়।



দেশপ্রেমের কারণ - যাঁরা শিল্পী, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, গায়ক – তাঁরাও সবাই তাঁদের নিজেদের সৃষ্টি আর কর্মসামর্থ্য নিয়ে দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারেন। পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য বহু বিপ্লবী যেমন আত্মবলি দিয়েছেন; রবীন্দ্রনাথ, নজরুল প্রমুখ কবিরা বহু উদ্দীপনামূলক কবিতা ও গান রচনা করে দেশের প্রতি তাদের দেশপ্রেম যেমন প্রকাশ করেছেন, তেমনই দেশের মানুষকেও উদ্দীপিত করেছেন।

উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে দেশের প্রতি ভালোবাসার কথা উচ্চারিত হতে শুরু করেছে। রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মিনী উপাখ্যান’ কাব্যে উচ্চারিত হয়েছে স্বাধীনতার প্রতি পরাধীন দেশের নাগরিকের অন্তরের গভীর আকুলতা   ___


 _____স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে

কে বাঁচিতে চায়?

দাসত্ব শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে

কে পরিবে পায়?”


সাহিত্যে দেশপ্রেম - নবীনচন্দ্র সেনের ‘পলাশীর যুদ্ধ' কাব্যে রয়েছে দেশের জন্য আত্মত্যাগের কথা। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ভারতবর্ষের বন্দনা কবিতায় লিখেছেন – “যেদিন সুনীল জলধি হইতে উঠিলে জননী ভারতবর্ষ, রবীন্দ্রনাথ লেখেন, “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি”। নাটকেও দেশপ্রেমের কথা প্রচার করেছেন রাজকৃথ্ব রায়, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ। বিদেশি শাসক ভীত হয়ে উঠেছিল নাটকের মধ্যে ইংরেজ বিদ্বেষে এবং ইংরেজ অনুগৃহীতদের প্রতি ব্যঙ্গবিদ্রুপে। ফলে ব্রিটিশ শাসক ড্রামাটিক পারফরম্যান্স অ্যাক্ট বা নাট্য নিয়ন্ত্রণ বিল আনে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে। 


দেশপ্রেমিকের পরিচয় - যিনি প্রকৃত দেশপ্রেমিক, তিনি দেশের জন্য তাঁর সর্বস্ব ত্যাগ করতে পারেন। দেশকে মাতৃরূপে উপলব্ধি করে, ইংরেজের শাসন ও শোষণ থেকে ভারতবাসীকে তথা দেশকে উদ্ধার করার জন্য ক্ষুদিরাম, বাঘাযতীন, ভগৎ সিং প্রমুখ বিপ্লবীরা নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র, মহাত্মা গান্ধি, মাতঙ্গিনী হাজরা, প্রীতিলতা ওয়াদেদার, জহরলাল নেহরু প্রমুখ রাজনীতিবিদরা দেশকে চিত্তরঞ্জন দাশ, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, সরোজিনী নাইডু, ভালোবেসে দেশের মুক্তির জন্য বহু কৃচ্ছ্রসাধন করে গেছেন। বিনয়-বাদল-দীনেশের আত্মবলিদান, সূর্য সেনের নির্ভীকতা, উল্লাসকর দত্তের দেশের জন্য প্রাণোৎসর্গ আজও স্মরণীয় হয়ে আছে।



উপসংহার - বিদেশিদের শাসন-শোষণের হাত থেকে আজ ভারতবর্ষ মুক্ত হয়েছে, কিন্তু মুক্তি পায়নি দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা ও অস্বাস্থ্যের হাত থেকে। তাই আজকে দেশপ্রেমিকের আদর্শ হবে দেশের অজস্র দুর্গত মানুষকে সুখী ও সচ্ছল করে তোলা। বর্তমান ছাত্রসমাজেরও দেশকে গড়ার স্বপ্ন মনের মধ্যে বহন করা উচিত। আজকের স্বাধীন ভারতবর্ষ থেকে ব্যাপক অনগ্রসরতা এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে হলে, আগের মতোই নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিতে হবে এবং দেশপ্রেম সার্থক করে তুলতে হবে।



❦︎ সমাপ্ত ❦︎


রচনা টি ভালো লাগল নিচে 👇👇share করতে ভুলবেন না

Post a Comment

Previous Post Next Post