বাংলা (প্রথম ভাষা)
অষ্টম শ্রেণি
➪নীচের প্রশ্নগুলি উত্তর দাও:
১. 'দাঁড়াও' কবিতায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আততি কীভাবে ধরা দিয়েছে?
✍︎উত্তর - ‘দাঁড়াও’ কবিতায় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় মানুষকে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে বলেছেন। বর্তমান পৃথিবীতে কিছু লোভী ও স্বার্থপর মানুষের চক্রান্তে সাধারণ মানুষের উপর নেমে এসেছে নিষ্ঠুর আঘাত। কবি মনে করেছেন, একদল মানুষের ওপর আর একদল মানুষের এই অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা দরকার। এজন্য মানুষকেই গভীর সহমর্মিতা ও মুক্তমন নিয়ে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। সেটাই হল নিপীড়ন ও নৈরাশ্য থেকে মুক্তির একমাত্র পথ। মানুষ সেই পথে এগিয়ে চলুক, সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে এটাই কবির প্রার্থনা।
২. “লাঠি ধরলে বটে!”
— বক্তা কে? কার সম্পর্কে তার এই উক্তি। উক্তিটির মধ্য দিয়ে তার কোন মনোভাবের পরিচয় পাও?
✍︎উত্তর - উদ্ধৃত অংশটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের "পল্লীসমাজ" রচনাংশ থেকে গৃহীত হয়েছে। এই অংশের বক্তা হলেন আকবর আলি।
☞︎︎︎ আকবর আলি রমেশের সম্পর্কে উক্তিটি করেছিলেন।
☞︎︎︎ আকবর ছিলো পিরপুরের প্রজা এবং একদিকে লাঠিয়াল । সে সব সময় নিজের কর্তব্যে দৃঢ় এবং তার আত্মসম্মান বোধ প্রবল। সে রমেশের কাছে পরাজিত হলেও তার কোনো আক্ষেপ নেই । তাই এখানে তার উচ্চ মানসকিতার পরিচয় পাওয়া যায়।
৩. প্রাণ আছে, প্রাণ আছে
– ‘ছন্নছাড়া’ কবিতায় এই আশাবাদ কীভাবে ধ্বনিত হয়েছে?
✍︎উত্তর - কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত তাঁর 'ছন্নছাড়া' কবিতাটির মধ্য দিয়ে প্রাণের আশাবাদ এবং 'এক প্রত্যয়ের তপ্ত শঙ্খধনী' ব্যক্ত করেছেন। কবিতায় বর্ণিত তথাকথিত 'নেই রাজ্যের বাসিন্দে’ রোগা মেজাজের বেকার যুবকরা সমাজে 'ছন্নছাড়া' হিসেবেই পরিচিত। তারা বিনয়ী নয়, তাদের ভদ্রতা শালীনতা নেই। তাদের জন্য সর্বত্রই 'না'।
কিন্তু আপাতভাবে এই ছন্নছাড়া যুবকরাই রাস্তায় পড়ে থাকা এক বেওয়ারিশ ভিখারির মরণাপন্ন অবস্থায় তার পাশে এসে তার প্রাণ বাঁচিয়ে তুলতে তৎপর হয় তারা। চারপাশের প্রতিবন্ধকতা ও নিরাশার মধ্যেও তারা প্রাণের সন্ধান করে। তাই তাদের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতার প্রতিফলন ঘটেছে। মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যেই প্রাণকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ অনুভব করা যায়। কবি এই ব্যাপারে আশাবাদী।
৪. শিমুল গাছ অনেকে দেখিয়াছ।
—'গাছের কথা' গদ্যাংশে শিমুল গাছের প্রসঙ্গ লেখক কীভাবে স্মরণ করেছেন?
✍︎উত্তর - ‘গাছের কথা’ প্রবন্ধে লেখক জগদীশচন্দ্র বসুর ব্যক্তিগত অনুভূতির মধ্যে দিয়ে শিমুল গাছের প্রসঙ্গ এনেছেন। বীজ সংক্রান্ত আলোচনায় লেখক দ্বিতীয়বার তাঁর ছেলেবেলার কথা মনে করেছেন। শিমুল ফল ফেটে হাওয়ায় তুলোর সঙ্গে বীজ উড়তে থাকলে, ছোটোবেলায় লেখক তা ধরার জন্য ছোটাছুটি করতেন। সেই তুলো-সহ বীজটিকে হাওয়া অনেক ওপরে নিয়ে যেত ফলে ধরা যেত না।
৫. “বিশ্বের বুক ফেটে বয়ে যায় এই গান—'
– কোন হতাশার কান্না বিশ্বজুড়ে বয়ে যায়?
✍︎উত্তর - গৃহহীন হাওয়াদের কোথাও দুদন্ড স্থির হয়ে বিশ্রাম নেওয়ার অবকাশ বা অবসর নেই। তারা কেঁদে কেঁদে পৃথিবীর সর্বত্র একটি নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ করে বেড়ায়। কিন্তু এই অক্লান্ত প্রচেষ্টার পরও হাওয়ারা বারবার ব্যর্থ হয়। বিশ্বজুড়ে আশ্রয়ের জন্য হাওয়াদের আকুল কান্না আর না পাওয়ার হাহাকার ছড়িয়ে পড়ে। সেই কষ্টই প্রকাশ পেয়েছে বৃদ্ধদেব বসুর লেখা ‘হাওয়ার গান' কবিতায়। হাওয়ারা সকলকে বারে বারে জিজ্ঞাসা করে যে, কবে, কোথায়, কখন তাদের এই অনন্ত অনুসন্ধানের শেষ হবে। আশ্রয়হীন হাওয়াদের বাড়ি খুঁজে না পাওয়ার দুঃখের গান সারা বিশ্বে ধ্বনিত হয়।
৬. ছেলের কথা শুনেই বুকুর মার মাথায় বজ্ৰঘাত।”
– বুকুর কোন কথায় তার মা অতিথিদের সামনে অস্বস্তিতে পড়লেন?
✍︎উত্তর - আশাপূর্ণা দেবী রচিত "কি করে বুঝবো" গল্পে বুকুর স্বভাব হল বাড়িতে বা বাইরে সে যার মুখে যা শুনেছে সকলের সামনে তা বলে ফেলা । উত্তরপাড়া থেকে ভবানীপুরে নির্মলার বাড়িতে হঠাৎ উদয় হয় বেনু মাসি ছেনু মাসি ও ডাম্বল, কিন্তু তাদের আগমন বুকুর মা মোটেই ভালোভাবে নেন নি । কিন্তু অতিথিদের সামনে যখন তিনি হই হই করে অভ্যর্থনার অভিনয় করেন তখন বুকু তাদের সামনে সত্য কথাটি বলে ফেলে । সে বলে, " ও কি মা ? এই মাত্র যে বললে বাবারে, শুনে গা জ্বলে গেল, অসময়ে লোক বেড়াতে আসা! ভালো লাগেনা, এখন আবার ভালো লাগছেনা বলছ কেন ?" - এই কথা শুনে বুকুর মা অতিথিদের সামনে অস্বস্তিতে পড়লেন।
৭. পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি' কবিতায় গ্রামজীবন সম্পর্কে কবির যে অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে তার পরিচয় দাও।
✍︎উত্তর - কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি' শীর্ষক কবিতায় পাড়াগাঁয়ের এক অলস, শান্ত, স্নিগ্ধ ও রৌদ্রোজ্জ্বল দুপুরের চিত্র অঙ্কন করেছেন। বিষণ্নতার ছবি: সেই রৌদ্রোজ্জ্বল দুপুরের নির্জনতা কবিমনে যে বিষণ্ণতার সৃষ্টি করে, তার আভাস আলোচ্য কবিতায় পাওয়া যায়। প্রকৃতির অনাড়ম্বর নিঃসঙ্গতার রূপবর্ণনা করেছেন কবি। গ্রামের উন্মুক্ত সবুজ প্রান্তর আর সেখানকার শঙ্খচিলের কাছেই তাঁর মনের খবর রয়েছে। তাদের কাছেই কবির অন্তরাত্মা যুগ যুগ ধরে যেন কথা শিখেছে। ব্যথিত স্বপ্নের ছবি- যে স্বপ্নে ব্যথা বা যন্ত্রণা আছে, দুপুরের রোদে সেই স্বপ্নেরই গন্ধ পেয়েছেন কবি। শুকনো পাতা, শালিকের কণ্ঠস্বর, ভাঙা নির্জন পরিত্যক্ত মঠ, দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যাওয়া মেয়েটির নকশাপেড়ে শাড়ি—কবির মনে বিষাদের ছায়া ফেলেছে। যত্নহীন বুনো চালতার নুয়ে পড়া ডাল, হিজল গাছে বেঁধে রাখা মালিকানাহীন ভাঙাচোরা নৌকো সেই বিষণ্ণতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
৮. এলাহি ব্যাপার সব।' – 'নাটোরের কথা' রচনাংশ অনুসরণে সেই এলাহি ব্যবস্থাপনার বিবরণ দাও।
✍︎উত্তর - এলাহি ব্যাপারের বিবরণ: নাটোর পৌঁছোনোর পর নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথের আন্তরিক আতিথেয়তা ও আদরযত্নে মুগ্ধ হয়েছিলেন লেখক এবং অন্যান্য অতিথিরা। কার্পেট, তাকিয়া, ভালো দামি ফুলদানি, ঝাড়লণ্ঠন ইত্যাদিতে সাজানো নাটোররাজের বাড়ি ও বৈঠকখানা দেখে লেখকের সেটিকে ‘ইন্দ্রপুরী’ বলে মনে হয়েছিল। এই রাজসমাদরে খুশি হয়েই তিনি একে ‘এলাহি ব্যাপার’ বলতে চেয়েছেন।
৯. ‘গড়াই নদীর তীরে’ কাব্যাংশে প্রকৃতিচিত্র কীভাবে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে?
✍︎উত্তর - জসীমউদ্দীন রচিত ‘গড়াই নদীর তীরে' শীর্ষক কবিতায় একটি গ্রামের নদীতীরের দৃশ্য বর্ণিত হয়েছে। গড়াই নদীর তীরে অবস্থিত কুটিরটিকে পরম মমতায় ঘিরে রয়েছে গাছের লতাপাতা, মাচানের উপর সিম, লাউ,লাল নটে শাক আর কুমড়ো গাছ তাদের ফুল কুটিরের শোভা বাড়িয়ে তুলেছে। আশেপাশের ডোবা থেকে মেয়ে ডাহুক পাখিরাও বিচিত্র স্বরে গান গেয়ে কুটিরের সামনে ঘুরে বেড়ায়। বাইরে রোদে সযত্নে শুকোতে দেওয়া হয়েছে মটরের ডাল, মসুরের ডাল, কালোজিরে, ধনে, লংকা, মরিচ ইত্যাদি। এর মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে সুখী স্বচ্ছল গৃহস্থালির চিত্র। কবি কল্পনা করেছেন, সন্ধ্যা সকালের রঙিন মেঘেরাও আকাশে ভেসে বেড়ানোর সময়ে এই কুটিরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে থমকে দাঁড়ায়। কবি গ্রামবাংলার প্রকৃতির নানান উপকরণের মধ্যেই লক্ষ করেছেন রঙের সমারোহ। তার মনে হয় সেই রঙে মিশে আছে ভালোবাসার ছোঁয়া।
𖣘❦︎সমাপ্ত❦︎𖣘
Post a Comment